রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরেই অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীনরা।এদিকে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলা-উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করতে চায় দলটির হাইকামন্ড। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন করার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেবে দলটি।
তথ্য মতে, আ.লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষপর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু এ কমিটি সারাদেশের একটি জেলায়ও কাউন্সিল করতে পারেনি। শুধু হাতে গোনা দু’-একটি জেলায় সম্মেলন করেছে। আবার কয়েকটিতে আহ্বায়ক কমিটি থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে।
এর বাইরে নতুন করে কোনো কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। বেশ কয়েকটির জেলায় কমিটির মেয়াদ সাত বছরেরও বেশি হয়ে গেছে। তবে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি সম্মেলনের আগেই জেলা-উপজেলাতে সম্মেলন করতে বলেছেন আ.লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ জন্য দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। নেত্রীর এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর জেলা-উপজেলা সম্মেলন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন আ.লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।আ.লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপি ও স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মীদের নামের তালিকাও চাওয়া হবে ওই চিঠিতে।তৃণমূলে ওই তালিকা অনুযায়ী, নৌকাবিরোধী মন্ত্রী-এমপিসহ সকল নৌকা বিরোধিতাকারীকে চিহ্নিত করা হবে এবং জেলা-উপজেলা সম্মেলনে তাদেরকে দায়িত্বশীল পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।আ.লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ যে সকল জেলা রয়েছে তার মধ্যে বরগুনা জেলা আ.লীগের সম্মেলন ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বরে অনষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখনো সেই কমিটি বহাল আছে।
তাছাড়া ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, চট্টগ্রাম উত্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, টাঙ্গাঈল, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, বগুড়া, খুলনা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ , যশোর , বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে আ.লীগের জেলা শাখার দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
শুধু জেলাতেই নয়, একই অবস্থা উপজেলাসহ ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়েও। যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সেসব জায়গায় দ্রুত সম্মেলন করা হবে। একই সঙ্গে যেসব জায়গায় সম্মেলন হয়েছে কিন্তু নতুন কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, সেসব জায়াগায় দ্রুত কমিটি দেয়া হবে।
প্রায় দেড় মাস আগে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো গোছানোর সিদ্ধান্ত হয়। তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী করতে আট বিভাগের জন্য গঠন করা হয় আটটি সাংগঠনিক টিম।ওই সব টিমে আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য, বিভাগগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আছেন। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠিক সফর শুরু করেন।
আ.লীগ সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে আ.লীগ। এরপর ক্ষমতাসীন দলটিতে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য তৃণমূলে ভিন্নপন্থি নেতাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।তাই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই ওই সকল বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী, দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী, কর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও সমালোচিতদের চিহ্নিত করে নতুন কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে।
শুধু তাই নয়, আ.লীগের দাপট দেখিয়ে যে সকল মন্ত্রী-এমপি সুবিধাবাদীদের দলে কমিটিতে প্রবেশ ঘটিয়েছেন, তাদেরও বের করা হবে বলে আ.লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রে আরো জানায়, বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার পাশাপাশি দলের সব পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন ও তরুণ নেতাদের নিয়ে আসা হবে।
বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা যারা আ.লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন, তারাই এবার গুরুত্ব পাবেন দলে। এ সার্বিক বিষয়গুলো সুচারুভাবে তদারকি করার জন্য আ.লীগের কেন্দ্র থেকে যে আট সদস্যের কমিটি করা হয়েছে তারা এ বিষয় দেখভাল করবেন।
আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক জেলা-উপজেলাতে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জাতীয় সম্মেলনের আগেই ওই সকল জেলা-উপজেলায় নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে এবং তৃণমূলপর্যায়ে দলকে আরো শক্তিশালী করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আ.লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ২৩ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিন বছর পূর্ণ হবে। অতীতে অনেক সময় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর নানা কারণে সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও এবার নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ অক্টোবরেই জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আ.লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ওই সম্মেলনের আগেই জেলা-উপজেলায় নতুন কমিটি ঘোষণা করবে দলটি।
Leave a Reply